Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

আউশ ধানের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

আউশ ধানের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি
এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
ড. মো. আব্দুল মালেক
ভূগর্ভস্থ পানির অপচয় না হওয়ার বৃষ্টিনির্ভর আউশ ধান চাষে কৃষকগণ আগ্রহী হয়ে উঠছেন, কারন বীজ-সার প্রান্তিক কৃষকদের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিচ্ছে সরকার, ফলে কৃষকরা আউশের উচ্চফলনশীল জাতের বীজ পেয়ে খুশি তাছাড়াও আউশ ধান চাষে সেচ কম লাগে বিধায় উৎপাদন খরচও তুলনামূলকভাবে কম এবং কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। ফলে দেশে আউশ ধানের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আউশের উচ্চফলনশীল জাত নির্বাচনের মাধ্যমে চাষের সঠিক নিয়ম মেনে চললে ভালো ফলন পাওয়া এবং সর্বোপরি স্বল্প উৎপাদন খরচে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব; এ কথাগুলো কৃষকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে কাজ করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ। তাছাড়া গত কয়েক বছর ধরে আউশ মৌসুমকে সামনে রেখে সরকার  কৃষকদের সরকারি প্রণোদনা বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রণোদনার মধ্যে থাকছে উচ্চফলনশীল জাতের বীজ ও সার। আউশ আবাদ বাড়ানোর পরিকল্পনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ ও নিবিড় মনিটরিং। ফলে সেচসাশ্রয়ী আউশ আবাদে ব্যাপক সাড়া দিচ্ছেন কৃষকরা, যার সুফল পাচ্ছে পুরো দেশ।
তিন বছর আগে দেশে ১০ লাখ হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদ হতো। দুই বছর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে আরও এক লাখ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। গত মৌসুমে অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরে তা এক লাফে দুই লাখ হেক্টর বেড়ে যায়। গত ২০২১-২২ মৌসুমে আউশ ধানের আবাদ হয়েছে ১৩ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে। আবাদের আওতায় জমির পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি উচ্চফলনশীল জাতের উদ্ভাবন ও মাঠ পর্যায়ে দ্রুত সম্প্রসারণের ফলে আউশ ধানের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে চলেছে।
গত তিন মৌসুম আউশের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির পেছনে কাজ করেছে সরকারের কৃষিবান্ধব নানামুখী উদ্যোগ, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে আউশ ধানের বীজ ও সার বিতরণ। এ ছাড়া স্বল্প জীবনকালের উচ্চফলনশীল জাতের আউশ ধানের জাত উদ্ভাবন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের নিরলস পরিশ্রম এবং কৃষকদের মধ্যে আউশ ধান আবাদের সুফল ও উপকারিতা যথাযথভাবে তুলে ধরার ফলে আউশের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
উৎপাদন বৃদ্ধির উপায় : ফলন বৃদ্ধিতে প্রয়োজন ভালো জাতের ভালো বীজ। উচ্চফলনশীল জাত নির্বাচন করে তার ভালো মানের বীজ নিশ্চিত করতে পারলেই কাক্সিক্ষত ফলন প্রত্যাশা করা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে একমাত্র উচ্চ গুণাগুণসম্পন্ন মানসম্মত বীজ ব্যবহারের মাধ্যমে ফসলের ফলন ১৫-২০% বৃদ্ধি করা সম্ভব।
ভাল বীজের বৈশিষ্ট্য : বীজের কৌলিতাত্ত্বিক বিশুদ্ধতা বজায় থাকা, অন্য ফসল ও জাতের বীজ হতে মিশ্রণমুক্ত হওয়া, রোগ-জীবাণু ও কীট-পতঙ্গ মুক্ত হওয়া, উচ্চ অংকুরোদগম ক্ষমতা বজায় থাকা, বীজের সঠিক আর্দ্রতা বজায় থাকা এবং সুনির্দিষ্ট কোন জাতের সকল বীজ প্রায় একই আকারের, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, পরিপক্ব ও পুষ্ট হতে হবে। এ ছাড়াও ভালো বীজের স্বাভাবিক উজ্জ্বল রঙ বজায় থাকবে।
আউশের উচ্চফলনশীল জাত : বোনা আউশ ধানের জনপ্রিয় ও উচ্চফলনশীল আধুনিক জাতসমূহের মধ্যে ব্রি ধান৪৩, খরা সহনশীল ব্রি ধান৬৫ ও ব্রি ধান৮৩; খরাসহিষ্ণু ও স্বল্প জীবনকালের (৯৫-১০০ দিন) বিনাধান-১৯ এবং বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার জোয়ার-ভাটা অঞ্চলে চাষোপযোগী ব্রি ধান২৭ ও ব্রি ধান১০৬।
রোপা আউশ ধানের আধুনিক জাতসমূহ : ব্রিধান৪৮, ব্রিধান৮২ ও ব্রিধান৮৩, ব্রিধান৮৫, ব্রিধান৯৮ এগুলো রোপা আউশ ধানের আধুনিক জাত, খরাসহিষ্ণু ও স্বল্প জীবনকালীন জাতসমূহ (৯৫-১০০ দিন) বিনাধান-১৯ ও বিনাধান-২১, অধিক ফলনশীল জাত (৬.৫-৭০ টন/হেক্টর) ব্রি হাইব্রিড ধান৭ এবং বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার জোয়ার-ভাটা অঞ্চলে চাষোপযোগী ব্রি ধান২৭ ও ব্রি ধান১০৬।
বীজ বপন ও হার : বোনা আউশে ২৫ মার্চ হতে ২০ এপ্রিলের মধ্যে বীজ বপন,  রোপা আউশে বীজ বপন ৩০ মার্চ হতে ৩০ এপ্রিল  পযর্ন্ত উপযুক্ত সময়। ছিটিয়ে বপনের ক্ষেত্রে একর প্রতি ২৭-৩০ কেজি। সারিতে বপনের ক্ষেত্রে একর প্রতি ১৮-২১ কেজি এবং সারিতে চারা রোপণের ক্ষেত্রে ১০-১২ কেজি বীজ প্রয়োজন।
চারার বয়স : ১৫-২০ দিন বয়সের চারা রোপণ করতে হবে। প্রতি গোছায় ২-৩টি করে চারা ৮ ইঞ্চি দ্ধ ৬ ইঞ্চি দূরত্বে রোপণ করতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনা : কৃষি পরিবেশ অঞ্চলভেদে সারের মাত্রা কম বেশি হতে পারে। তবে সাধারণভাবে একর প্রতি ৪২-৪৫ কেজি ইউরিয়া, ২০-২৫ কেজি ডিএপি, ৩০-৩৩ কেজি এমওপি, ১৫-১৮ কেজি জিপসাম এবং ২.০-২.২ কেজি জিংক সালফেট সার প্রয়োগ করতে হবে। শেষ চাষের সময় ১/৩ ভাগ ইউরিয়া এবং অন্যান্য সকল সার প্রয়োগ করতে হবে। দ্বিতীয় কিস্তি ইউরিয়া সাধারণত রোপণের ১২-১৫ দিন পর অর্থাৎ কুশি আসা পর্যায় এবং ৩য় কিস্তি কাইচথোড় জন্মাবার ৫-৬ দিন পূর্বে উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। জমিতে গন্ধক এবং দস্তার অভাব না থাকলে শুধুমাত্র জিপসাম এবং দস্তা সার প্রয়োগের দরকার নেই। বোনা আউশে ইউরিয়া সমান দুই কিস্তিতে ১ম কিস্তি শেষ চাষের সময় এবং ২য় কিস্তি বপনের ৩০-৩৫ দিন পর উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।
আগাছা দমন : সাধারনত হাত দিয়ে, নিড়ানী যন্ত্রের সাহায্যে অথবা আগাছানাশক ব্যবহারের মাধ্যমে বীজ বপন/চারা রোপনের ৩০-৩৫ দিন পর্যন্ত আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
সেচ : চারা লাগানোর সময় বা বীজ বপনের সময় বৃষ্টিপাত না হলে সময়মতো চারা রোপণ/বীজ বপনের জন্য সম্পূরক সেচ দিতে হবে। সরাসরি বীজ বপনের ক্ষেত্রে জমিতে জো অবস্থা বিরাজমান না থাকলে অঙ্কুরিত বীজ জমি কাদা করে লাইনে/ছিটিয়ে বপন করতে হবে।
রোগ ও পোকামাকড় দমন : আউশ মৌসুমে সাধারণত খোলপোড়া রোগ, ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতা পোড়া রোগ, টুংরো এবং বাঁকানি রোগের প্রকোপ দেখা দিলে দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে। আউশের মুখ্য পোকাগুলো হলো মাজরা পোকা, পামরি পোকা, থ্রিপস, গান্ধি পোকা, সবুজ পাতাফড়িং এবং বাদামি গাছফড়িং। পোকা দমনে আলোর ফাঁদ এবং পার্চিং ব্যবহারসহ প্রয়োজনে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
ধান কাটা ও মাড়াই : শতকরা ৮০ ভাগ ধান পাকলে কাটতে হবে। বৃষ্টির মৌসুমে আউশ ধান মাড়াইয়ের জন্য মাড়াইযন্ত্র ব্যবহার করা উত্তম। মাড়াই করে সাধ্যমতো ঝেরে বৃষ্টিমুক্ত স্থানে ধান শুকানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
কৃষিবান্ধব সরকারের মাননীয় কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক এমপি বলেন আউশ ধানের আবাদ বাড়াতে যা যা করণীয় তা করে যাচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। পরিবর্তিত জলবায়ুর সাথে খাপখাইয়ে ক্লাইমেট স্মার্ট এবং স্বল্প জীবনকালের অথচ উচ্চফলনশীল আউশ ধানের জাত উদ্ভাবনে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এবং বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)সহ অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, যা ভবিষ্যতে ভূগর্ভস্থ পানি সাশ্রয়ের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষাসহ স্বল্পখরচে বৃষ্টিনির্ভর আউশের আওতায় জমির পরিমাণ বৃদ্ধির মাধ্যমে আউশ তথা সার্বিকভাবে ধানের মোট উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।  
   
লেখক : পরিচালক (গবেষণা), বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), ময়মনসিংহ, মোবাইল নম্বর : ০১৭১২১০৬৬২০, ইমেইল : malekdina@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon